পর্তুগালের রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

পর্তুগালে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর মারসেলো রেবেলো দ্য সোজা’র কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন দেশটিতে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান। ১৮ ডিসেম্বর রাজধানী লিসবনে অবস্থিত পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন ‘প্যালাসিও দ্যা বেলেম’-এ আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিচয়পত্র পেশ করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে ‘বাংলাদেশ ভবন’ থেকে ‘প্যালাসিও দ্যা বেলেম’ পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রদূত সালাম গ্রহণকালে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

পর্তুগালের রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র প্রদানকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্তুগিজ সম্প্রদায় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেরতা নুনেস, রাষ্ট্রপতির কূটনৈতিক বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যানা মাটির্নও, রাষ্ট্রাচার প্রধান ক্লারা নুনেজ দস সান্তোস, রাষ্ট্রপতির অসামরিক ও সামরিক উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব আব্দুল্লাহ আল রাজী উপস্থিত ছিলেন।

পরিচয়পত্র পেশের পর পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে একটি সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।

বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ‘৫০০ বছরের’ ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা গ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেন।

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সম্প্রতি বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ও বাংলাদেশ ভবন ক্রয়ের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত অনুরূপভাবে ঢাকায়ও পর্তুগিজ দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনার জন্য পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন।

পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি রাষ্টদূতের উত্থাপিত বিষয়সমূহকে গুরুত্ব সহকারে শ্রবণ করেন এবং রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও শান্তি কামনা করে তাদের শুভেচ্ছা প্রেরণ করেন।

সম্প্রতি প্রথম (১৮ শতকের) বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের পুনঃমুদ্রণের কথা উল্লেখ করে পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জনগণের এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অদ্যাবধি বিদ্যমান। তিনি বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতি লিসবনে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ক্রয়ের সংবাদে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ফলে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো বেগবান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পর্তুগিজ দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি পর্তুগিজ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও সৌজন্য সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতি পর্তুগালে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মদক্ষতা এবং আন্তরিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ১৯৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ফরেন অ্যাফেয়ার্স ক্যাডার) যোগদান করার মাধ্যমে তার বর্ণিল ক্যারিয়ার শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি নিউইয়র্কের জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনসহ তিনি সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি, রাষ্ট্রীয় মিশনে যথাক্রমে কাউন্সিলর , চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, এবং

সর্বশেষ তিনি পাকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার যেমন কমনওয়েলথ, ওআইসি , আই ও আর এ, এ সি ডি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইত্যাদি সংস্থায় সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

শিক্ষাজীবনে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি নেদারল্যান্ডের হেগ এর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিকাশ এর বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনের উন্নয়নের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, এবং

ফ্রান্সে থেকে বিভিন্ন পেশাগত ডিগ্রী অর্জন করেন। ভিন্ন গুণাবলির অংশ হিসেবে ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন সংবাদ উপস্থাপক এবং খবরের কাগজে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখতেন নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান।